ইট পাটকেল পর্ব ১০ - ইট পাটকেল সকল পর্বের লিংক

দিনের সূর্য ঢলে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে।কামিনী চৌধুরী প্রায় আট ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে ছিল।ততক্ষণ আমজাদ চৌধুরী তার পাশে তার হাত আকড়ে ধরে বসে ছিল।কামিনী চৌধুরীর জ্ঞান ফিরতে দেখেই তাকে কেবিন থেকে বের করে দেয় আশমিন। কামিনী চৌধুরী চোখ খুলে নিজের পাশে শুধু আশমিন কে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো। 
ইট পাটকেল পর্ব ১০ - ইট পাটকেল গল্পের লিংক

তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না আমজাদ, তার ভালবাসা তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। আশমিন এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো কামিনী চৌধুরীর দিকে। মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু এছাড়া আর উপায় নেই।

আরো পড়ুন : ইট পাটকেল পর্ব ১
ইট পাটকেল পর্ব ২
ইট পাটকেল পর্ব ৩
ইট পাটকেল পর্ব ৪
ইট পাটকেল পর্ব ৫
ইট পাটকেল পর্ব ৬
ইট পাটকেল পর্ব ৭
ইট পাটকেল পর্ব ৮
ইট পাটকেল পর্ব ৯
ইট পাটকেল পর্ব ১০
ইট পাটকেল পর্ব ১১
ইট পাটকেল পর্ব ১২
ইট পাটকেল পর্ব ১৩
ইট পাটকেল পর্ব ১৪
ইট পাটকেল পর্ব ১৫
ইট পাটকেল পর্ব ১৬
ইট পাটকেল পর্ব ১৭
ইট পাটকেল পর্ব ১৮
ইট পাটকেল পর্ব ১৯
ইট পাটকেল পর্ব ২০
ইট পাটকেল পর্ব ২১
ইট পাটকেল পর্ব ২২
ইট পাটকেল পর্ব ২৩
ইট পাটকেল শেষপর্ব ২৪

— আমার সামনে থেকে চলে যাও আশমিন।তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।

কামিনী চৌধুরী ভাঙ্গা গলা শুনে বুক কেপে উঠলো আশমিনের। তার আম্মুর এমন গলা এর আগে আর কখনো শোনে নি সে।এক পলক সেদিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো আশমিন।

আশমিন বেড়িয়ে যেতেই চিৎকার করে কেদে উঠলো কামিনী চৌধুরী। তার আর্তনাদে হসপিটালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠল।দরজার বাইরে আশমিন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরী হাত পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে আছে। আশমিন সেদিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। বুকের ব্যথা টা আবার বাড়ছে। তার পাশের কেবিনেই কামিনী চৌধুরী কে সিফট করা হয়েছে। আশমিন ধীর পায়ে নিজের কেবিনে প্রবেশ করতেই নূরের ঘৃণা ভরা দৃষ্টি দেখে মলিন হাসলো। নিজের বেডে গা এলিয়ে দিতেই মায়া নামক মহিলাটি এসে আশমিনের পাশে বসলো। আশমিন একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।

— খারাপ লাগছে?

— নাহ।

আশমিনের গলা স্বাভাবিক। মায়া মুচকি হাসলো। আশমিনের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— সব ঠিক হয়ে যাবে।

— হুম।

নূর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মায়া নামক মহিলার দিকে। নামের মতোই মহিলার মুখটা অসম্ভব মায়ার ভরা।কিন্তু নূরের ভালো লাগছে না। কামিনী চৌধুরী যেমন ই হোক না কেন নূর কখনো চায় নি তার সাথে এমন কিছু হোক। সে জানে ভালবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে দেখা কতটা যন্ত্রণা দায়ক। সে চায় নি তার শত্রুর সাথেও এমন কিছু হোক।অথচ আশমিন নিজের ছেলে হয়ে তাকে সেই কষ্ট টা দিল।কামিনী চৌধুরীর কান্নার আওয়াজ এখনো শোনা যাচ্ছে। বুক কেপে উঠলো নূরের। আশমিন চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে। মায়া নামক মহিলা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রাগে ঘৃণায় অসহ্য হয়ে উঠল নূর।

— অমি,,,(চিৎকার করে)

হন্তদন্ত পায়ে দৌড়ে এলো অমি।আশমিন ও চোখ খুলে তাকিয়েছে।নূর আশমিনের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে অমি কে বললো,

— আমি এক্ষুনি বাসায় যাবো অমি। সব ব্যবস্থা করো। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।

আশমিন কিছু বললো না। অমি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নূর বেড থেকে নেমে আশমিনের দিকে তাকালো। ঘৃণা নিয়ে বললো,,

— জানি না কেন আপনি এমনটা করলেন।কারণ যাই হোক না কেন। আমার আপনার প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। আপনার দিকে তাকালে গা গুলিয়ে আসছে। আপনার মতো ছেলে যেন কারোর ঘরে না হয় সেই দোয়া করি।
আসছি।

নূর বেরিয়ে যেতেই চোখ খুললো আশমিন। মায়া কাতর চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আশমিন সেদিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলো।

আমজাদ চৌধুরী একই ভাবে বসে আছে। কামিনী চৌধুরী এতক্ষণ কাদলেও এখন একেবারে শান্ত হয়ে গেছে।ঝড় আসার আগে পরিবেশ যেভাবে শান্ত হয়ে যায় কামিনী চৌধুরী ও সেভাবে শান্ত হয়ে গেছে। বেড থেকে নেমে বেরিয়ে এলো কামিনী চৌধুরী। আমজাদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে তার কেবিনের দরজার সামনে। তার পিছনে মায়া নামক মহিলা দাঁড়িয়ে। কামিনী চৌধুরী ধীর পায়ে হেঁটে আমজাদ চৌধুরীর সামনে দাড়ালো। আমজাদ চৌধুরী তার দিকে তাকাচ্ছে না।নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে।

— আমি হয়তো খারাপ। তবে তোমাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমি সম্পুর্ন সৎ ছিলাম আমজাদ। নিজের সবটা দিয়ে ভালবেসেছি তোমাকে। তবে আজ কেন আমাকে এই দিন দেখতে হলো? আমাকে এভাবে ভাঙ্গলে আমজাদ! তুমি আজ সেই কামিনী চৌধুরী কে মেরে ফেলেছো যে তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতো। আজ থেকে এই কামিনী চৌধুরীর না কোন স্বামী আছে আর না কোন ছেলে। তোমার নতুন বিবাহিত জীবন সুখের হোক।তুমি সবসময় ই আমার কাছে প্রিয়। তাই তোমার খারাপ চাইতে পারলাম না। ভালো থেকো।

কামিনী চৌধুরী উল্টো ঘুরে যেতে নিতেই আমজাদ চৌধুরী অস্থির হয়ে পথ আগলে ধরলো তার।ব্যগ্র গলায় বলল,

— কোথায় যাচ্ছো? তুমি অসুস্থ কামিনী। বাসায় চলো।রেস্ট নিতে হবে তোমার।

কামিনী চৌধুরী হাসলো। বিদ্রুপের গলায় বলল,

— দেখো কান্ড!অসুখ নিজেই বলে আমাকে সারাও। ভালো মজা করতে শিখেছো তো আমজাদ। যাই হোক, পথ ছাড়ো।ডিভোর্স লেটার সময় মতো পেয়ে যাবে।

আমজাদ চৌধুরী অবাক চোখে তাকালো কামিনী চৌধুরীর দিকে। চোখ দুটো ছলছল করছে তার।কাপা কাপা গলায় বললেন,

— ডিভোর্স!

— তো! তুমি কি ভেবেছিলে?সতিন নিয়ে সংসার করবো আমিজ?(তাচ্ছিল্যের হেসে)।আমি শিকদার বংশের মেয়ে কামিনী শিকদার। ভাগাভাগি আমার ধাতে নেই। যতদিন শুধু আমার হয়ে ছিলে আমি ও শুধু তোমার ছিলাম। আজ যখন ভাগ হয়েছো তখন পুরো তুমি টাকেই দান করে দিলাম।

আমজাদ চৌধুরী অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো কামিনী চৌধুরীর দিকে। কামিনী চৌধুরী একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।

আশমিন ও আজ বাড়ি ফিরে যাবে।এভাবে সময় নষ্ট করার মতো সময় তার হাতে নেই। সানভি সমস্ত ফর্মালিটি পুরোন করে এসেছে।আশমিন কেবিন থেকে বেরিয়ে আমজাদ চৌধুরীর পাশে এসে দাড়ালো।

— এখানেই থাকাতে চাও?

আমজাদ চৌধুরী কটমট চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন হালকা কেশে চোখ সরিয়ে নিলো। মায়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— গাড়ি তে গিয়ে বসুন আন্টি। আমি আব্বুকে নিয়ে আসছি।

মায়া আন্টি মুচকি হেসে চলে গেলো। আশমিন তার বাবার কাছে গিয়ে হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,

— আজ তোমার দ্বিতীয় বাসর রাত উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে ছোট একটা উপহার।যেভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছো মনে হয় না তোমাকে দিয়ে কিনা হবে।তখন এটা কাজে লাগবে।রুমে যাওয়ার আগে খেয়ে নিয়।

আমজাদ চৌধুরী বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন।রেগে ছেলের গালে চটাস করে একটা চর মারতেও ভুলে গেলেন।সানভি নিজের বুকে হালকা চাপড় মেরে মনে মনে আহাজারি করতে লাগলো। এরকম একটা ছেলে তার ঘরে হলে সে বনবাসে চলে যাবে বলে প্রতিজ্ঞা করে ফেললো।

আশমিন ততক্ষণে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেছে।গাড়ি তে বসে মায়া আন্টির সাথে কিছু কথা বলে ফোনে বিজি হয়ে গেলো আশমিন। আমজাদ চৌধুরী হনহন করে এসে গাড়ি তে বসলো।রাগে ফোসফাস করে আশমিন কে বললো,

— তোমার জন্য শেষ বয়সে এসে আমি ডিভোর্স নিতে পারবো না। যা করার তারাতাড়ি করো।

আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

— তুমি ডিভোর্সি হলে কি রাস্তায় মেয়েরা তোমাকে হেনস্তা করবে নাকি?আর বউ তো একটা জোগাড় করে দিলাম।আর কি চাই?

আমজাদ চৌধুরী উত্তর দিতে ভুলে গেলেন।রাগ গিলে ফেলে চোখ বন্ধ করে মাথা সিটে এলিয়ে দিলেন। সানভি ড্রাইভ করতে করতে আমজাদ চৌধুরীর দিকে অসহায় চোখে একবার তাকালো।আহা! বেচারা।

নূর বাসায় আসার কয়েক ঘন্টা পরেই আশমিন বাসায় এসে উপস্থিত হলো। আমজাদ চৌধুরীর সমস্ত জিনিস নতুন রুমে সিফট করা হয়ে গেছে এর মধ্যে। আশমিন আড় চোখে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে সানভি কে বললো,

— এই রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দাও সান।বাবার বাসরে জেন কোন ত্রুটি না থাকে।আগের বার না জানি কিভাবে কি হয়েছে।আমি থাকলে সব পার্ফেক্ট হতো। এবার তাই সব পার্ফেক্টলি করবে।

আমজাদ চৌধুরী সহ সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। আগের বার থাকলে পার্ফেক্ট হতো মানে!


কামিনী চৌধুরী নিজের রুমে বসে সব শুনে মুচকি হাসলো। বিরবির করে বললো,

— তুমি আমার পেট থেকে হয়েছো।আমি তোমার পেট থেকে হই নি। লেট’স দ্যা গেইম বিগেইন বেট্যা।

আশমিন সরাসরি নূরের রুমে ঢুকলো। নূর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে মাত্র।আশমিন কে দেখে যথারীতি বিরক্ত হলো। বাড়িতে এসেও শান্তি নেই। ঠিক এসে হাজির হয়েছে।

— এখানে কি চাই?

— বউ চাই।কাছে এসো।

— বের হন।

নূরের কথাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে আশমিন নূর কে জরিয়ে ধরলো। নূর কি নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

— বাবা দ্বিতীয় বাসর করে ফেলছে।আর আমার এখনো একটা ও হলো না। এটা মেনে নেয়া যায় বলো?তাই আজ বাসর করতে এসেছি।বাবা তোমাকে ননদ দেয়ার আগে আমি তাকে নাতি দয়ে চমকে দিবো। নাহলে নাক কাটা যাবে যে! এতো হ্যান্ডসাম লুক বৃথা হয়ে যাবে বউ।

নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন কে আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। তার এখন ঘুম দরকার।নূর হালকা হেসে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আশমিনের কাছ থেকে। এক গ্লাস পানি আশমিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— পানি খেয়ে নিন।তারপর ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো আমরা।

আশমিন ভ্রু কুচকে তাকালো নূরের দিকে। মনে সন্দেহ হলেও মুখে কিছু বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিলো পানি। পানি খাওয়ার সাথে সাথে নূর কে কাছে টেনে নিয়ে আদর করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।কয়েক মিনিট যাওয়ার পরেও যখন আশমিন ঘুমিয়ে পরলো না তখন নূর অস্থির হয়ে পরলো আশমিনের কাছ থেকে ছোটার জন্য। নূরের সারা গায়ে নিজের দেয়া চিহ্ন একে দিয়েই বিজয়ের হাসি হাসলো আশমিন। ব্যথায় চোখ থেকে পানি পরছে নূরের।আশমিন বাকা হেসে উঠে দাড়ালো।

কামিনী চৌধুরী ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে নিউজপেপারে চোখ বুলাচ্ছে।তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই কাল তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে বাসর ও সেরে ফেলেছে। আর কেউ এখনো ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসে নি।নূরের আজ কনসার্ট আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে। অসুস্থতার জন্য পোগ্রাম পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।আজ সারাদিন রিহার্সাল করবে। রাত আট টায় শুরু হবে কনসার্ট। আশমিন সেখানে চিফ গেস্ট। যদিও নূর সেটা জানে না।আশমিন নিজেই জানতে দেয়নি নুর কে। বর্ষসেরা শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেয়া হবে আজ। আশমিনের পোগ্রাম দুপুরে হলেও আশমিন রাতে একবার যাবে সেখানে।আশমিনের মতে,বউয়ের লেজ ধরে ঘোরা স্বামীদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে।আর সে কখনো নিজের দায়িত্বের অবহেলা করে না।

আশমিন সকাল সকাল জীমে গিয়েছে।ইদানীং সে নিজেকে নিয়ে চিন্তায় আছে। বউ তার দিকে খুব একটা নজর দিচ্ছে না। ব্যপার টা গুরুতর। এতো মেন্টাল স্ট্রেস নিতে পারছে না সে।কোথায় এসে হ্যান্ডসাম বরের সাথে চিপকে থাকবে তা না করে সারাক্ষণ লাঠিসোঁটা নিয়ে যুদ্ধ করার পায়তারা করে । সে ভালো বলে এখনো কিছু বলছে না। না হলে এতো দিনে দুই বাচ্চার মা করে ঘরে বসিয়ে রাখতো। রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো আশমিন।

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে এক ভ্রু উচু করে ফেললো আশমিন। কামিনী চৌধুরী গুনগুন করতে ব্রেকফাস্ট করছে।আমজাদ চৌধুরী এখনো নিচে আসেনি। সানভি আর অমি ব্রেকফাস্ট করতে করতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আশমিন কে দেখে তারা দাঁড়িয়ে গেলো। আশমিন ইশারায় বসতে বলে গম্ভীর গলায় বলল,

— আর কখনো খাবার ছেড়ে এভাবে দাঁড়াবে না।

দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। মিনিট দুই পরে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে নূর এসে উপস্থিত হলো। ধপ করে চেয়ারে বসে মাথা এলিয়ে দিলো টেবিলে।অজানা কারনে তার খুব ঘুম পাচ্ছে। রাগের বসে সে সত্যিই সেই গ্লাসের পানি খেয়ে ফেলেনি তো?উফফফ।মাথা ধরে বসে রইলো নূর। আশমিন নূরের দিকে নির্লিপ্ত চোখে চোখ রেখেই খাবার মুখে পুরছে।তীক্ষ্ণ চোখে নিজের দেওয়া চিহ্ন গুলোতে চোখ বুলিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল সে। আশমিনেএ পুর্ণ ধ্যান কামিনী চৌধুরীর দিকে। এতো শান্ত মানেই ঝড়ের পূর্বাভাস।

নূর টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে।অমি নূরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেও সানভি একটু পর পর লাজুক চোখে আশমিনের দিকে তাকাচ্ছে। আশমিনের খাওয়ার শেষ পর্যায়ে আমজাদ চৌধুরী আর মায়া আন্টি নিচে নেমে এলো। হালকা গোলাপি শাড়ি তে দারুণ লাগছে তাকে।মায়া আন্টির ভেজা চুল দেখে চোখ বড় বড় করে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকালো আশমিন।আমজাদ চৌধুরী ও ভ্রু কুচকে তাকালো ছেলের দিকে।এভাবে তাকানোর কি আছে? মায়ার ভেজা চুলের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো কামিনী চৌধুরী। কটমট করে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে। মায়া এসে আমজাদ চৌধুরীর বরাবর বসে পরলো। কামিনী চৌধুরী গটগট করে চলে গেলো সেখান থেকে। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— বিয়ে করবে না করবে না করে গড়াগড়ি খেয়ে কান্নাকাটি করছিলে।যেই বিয়ে করিয়ে দিলাম অমনি মেইন কাজ সেরে ফেললে!

আমজাদ চৌধুরী চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন।ভাগ্য ভালো আর কেউ শোনে নি।আশমিনের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বললো,

— বাবা হই তোমার। লাজলজ্জা সব খেয়ে বসে আছো? বেয়াদব ছেলে। বিয়েটা নকল, তাই এসব অবান্তর কথা বলা বন্ধ করো।

আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে বললো,,

— তারমানে বিয়েটা আসল হলে সত্যিই বাসর সেরে ফেলতে! এই বয়সে এতো ডেস্পারেট হওয়া ভালো না। আর আমাকে বেয়াদব নির্লজ্জ যাই বলো না কেন আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি আমার বাবার মতো হয়েছি। আমি নির্লজ্জ মানে সেও নির্লজ্জ। আর বিয়ে টা আসল ছিল।

আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব হয়ে বসে ছেলের চলে যাওয়া দেখলো।তার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে,বিয়ে টা আসল ছিল।

নূর চোখ বন্ধ করে বাবা ছেলের কথা শুনছিল।আশমিন কে এখন তার শুধু একজন অসহ্য ভয়ংকর মানুষ মনে হয়। চোখ খুলে আমজাদ চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নূর। শান্ত গলায় বললো,

— কিছু কথা ছিল আংকেল।

আমজাদ চৌধুরী ক্লান্ত চোখে তাকালো নূরের দিকে। নূর চোখ সরিয়ে নিলো। শান্ত গলায় বললো,

— আমি ডিভোর্স নিতে চাইছি।যেহেতু আমাদের বিয়ের কোন ডকুমেন্টস নেই সেহেতু মৌখিক তালাক দিলেই হবে।

আমজাদ চৌধুরী চমকে উঠলেন।ভয়ার্ত চোখে তাকালো নূরের দিকে। নূরের পিছনেই আশমিন দাঁড়িয়ে। শান্ত চেহারায় ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে আছে সে। সানভি অসহায় চোখে তাকালো আশমিনের দিকে।

আশমিন ঠান্ডা গলায় হুংকার দিয়ে বললো,

— সান,,,

সানভি পরিমরি পায়ে দৌড়ে গিয়ে একটি হকিস্টিক এনে দিলো আশমিনের হাতে।নূর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে।

মুহুর্তেই ডাইনিং টেবিলে চুর্নবিচুর্ন হয়ে গেলো। নূর চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে ভাঙ্গা কাচের দিকে। এটা তার মায়ের হাতে কেনা।মায়ের স্মৃতি এভাবে নষ্ট হতে দেখে রাগে কষ্টে মুখ লাল হয়ে গেলো নূরের।চোখ বন্ধ করে হাত মুঠ করে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলো। আশমিন হকিস্টিক টা সানভির হাতে দিয়ে নূরের সামনে এসে দাড়ালো। শক্ত হাতে নূরের মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,,

— আরেকবার এই কথা মুখ থেকে বের করলেও এই টেবিলের জায়গায় তুই থাকবি আর হকিস্টিকের জায়গায় আমি।কিভাবে ভাঙ্গবো তা সবার সামনে বলতে চাইছি না।

নূরের মুখ ছেড়ে দিয়ে শান্ত ভাবেই বেড়িয়ে গেলো আশমিন। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হয়নি।নূর হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। আমজাদ চৌধুরী আর মায়া আন্টি চুপচাপ বসে আছে। আমজাদ চৌধুরী কে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে তার কাছে এলেন মায়া আন্টি। নরম গলায় বলল,

— চিন্তা করবেন না।রাগ উঠেছে তাই এমন করেছে।মাথা ঠান্ডা হলে ঠিক হয়ে যাবে।

এমনিতেই আমজাদ চৌধুরীর মাথা গরম ছিল।মায়ার কথা শুনে আগুনে ঘি ঢালার কাজ হলো। সে আগুন চোখে তাকালো মায়ার দিকে। শক্ত করে বাহু চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো,

— নাটক করছো?বউ সাজতে চাইছো? কান খুলে শুনে রাখো,এই বাড়িতে কয়েকদিনের মেহমান তুমি।নিজের সীমার মধ্যে থাকো।আমার কাছে ঘেসার চেষ্টা করবে না। আর সবাই কে ভেজা চুল দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছো?আমি খুব আদর করেছি তোমায়।ছিঃ, নোংরা মেয়েমানুষ। আমার পরিবার থেকে দূরে থাকো।সময় হলে আমি নিজে তোমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলবো।

মায়া ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমজাদ চৌধুরীর দিকে। হাতটা ব্যথায় নিল হয়ে গেছে।কাল তো সব ঠিকই ছিল।আজ হঠাৎ করে কি হলো?

মায়া ধরা গলায় বলল,

— আপনি এসব কি বলছেন? আমি তো শুধু আপনাকে শান্তনা দেয়ার জন্য বলছিলাম,,

আমজাদ চৌধুরী তেতে উঠলেন। কর্কশ গলায় বলল,

— আমি চেয়েছি তোমার কাছে সান্তনা? একদম আমার কাছে ঘেসার চেষ্টা করবে না। অসহ্য লাগে তোমাকে।

মায়ার বাহু ছেড়ে গটগট করে চলে গেলো আমজাদ চৌধুরী।মায়া অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে দেখলো তার চলে যাওয়া।

কামিনী চৌধুরী রুমে বসেই ক্রুর হাসলো। টাকার ব্যবস্থা করা হতে গেছে। কাল অথবা পরশু টাকা হাতে পাবে।তখন সে নিজের আসল চাল চালবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্তরে এসে নূরের মন খানিকটা ভালো হয়ে গেলো। অন্যান্য শিল্পিরা এখন পারফর্ম করছে।মন ভালো হলেও আশমিনের উপর রাগটা ষোল আনাই আছে। পার্কিং এ আশমিনের গাড়ি বহর দেখে বাকা হাসলো নূর।কালো মার্সেটিজ টা আশমিনের অসম্ভব প্রিয়। এটা ছাড়া সে কোথাও যায় না।গাড়ি তে একটা স্ক্রেচ পরলেও আশমিন মাথা ঠিক রাখতে পারে না। ক্রুর হেসে নূর তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো

light one day I’m gonna fly away

One day when heaven calls my name

I lay down I close my eyes at night

I can see morning light

One day I’m gonna fly away

One day I’ll see your eyes again

I lay down I close my eyes at night

I can see morning light

নূরের সাথে একজন মেল সিঙ্গার পারফর্ম করছে।আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু দেখছে। নূর কে ঠিক একটা বার্বিডলের মতো লাগছে।বউ সুন্দরী হলে অনেক জ্বালা। সেখানে মন্ত্রী হয়েও কোন লাভ নেই।বউয়ের কাছে পাত্তা পাওয়া যায় না। পুতুলের মতো একটা বউ তার। সারাক্ষণ কোলে নিয়ে না ঘুরে এখানে বসে মুরগির মতো ঝিমাতে হচ্ছে!বিরক্তিতে মুখ তেতো হয়ে গেলো আশমিনের।

কনসার্ট শেষ হলো রাত দুইটায়।আশমি ভার্সিটি চত্তরে দলের কিছু ছেলের সাথে কথা বলছে।নূরের গাড়ি এসে আশমিনের গাড়ির সামনে থামলো। আশমিন ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।নূর হাতে হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই বিরস মুখে অমি দাঁড়িয়ে। নূর দুই আঙ্গুল দিয়ে স্যালুট দেখিয়ে ধুম করে আশমিনের গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেললো। ছেলেরা দৌড়ে যেতে চাইলে আশমিন ইশারায় থামিয়ে দিল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার জীবন বিডিতে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url