আযান দেওয়ার নিয়ম, আযানের জবাব এবং আযানের দোয়া - ইসলামিক বিবরণ

আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জানবো, "আযান দেয়ার নিয়ম, আযানের জবাব এবং আযানের দোয়া, যেখানে আযান দেয়া সুন্নাত ও ইকামত", "আজানের সুন্নত ও মুস্তাহাবসমূহ" ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব।
আযান দেওয়ার নিয়ম, আযানের জবাব এবং আযানের দোয়া - ইসলামিক বিবরণ

তো এখন চলুন, এক এক করে আযান দেওয়ার নিয়ম, আযানের জবাব এবং আযানের দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে সকল বিষয় তুলে ধরি।

আযান দেওয়ার নিয়ম, আযানের জবাব এবং আযানের দোয়া

আমরা প্রথম এ আযান দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো যে আযান কি ভাবে দিবেন। তারপর আযানের জবাব দেওয়া শিখব। অতঃপর আযানের দোয়া কি কি পড়তে হয় তাও জানবো। ইনশাআল্লাহ্।

আযান দেয়ার নিয়ম

আযানের সুন্নাত নিয়ম হলো মুয়াযযিনকে আযানের সময় হলে পাক পবিত্রবস্থায় সুন্দর করে ওযু করে মসজিদের মিনারা কিংবা কোন উঁচু পাক জায়গায় কিবলামুখী দাঁড়িয়ে দু'হাতের দু'শাহাদাত আঙ্গুলি কানের ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে খুব উচ্চঃস্বরে এবং সুমিষ্ট কন্ঠে নিম্নোক্ত আযানের বাক্যগুলো ধারাবাহিকভাবে উচ্চারণ করবে। প্রকাশ থাকে যে, যদি কোন মসজিদে মাইকের ব্যবস্থা থাকে তবে মাইকের হনসমূহ মসজিদের ছাদের উপরে দিয়ে মসজিদের ভেতর থেকেও আযান দেয়া যাবে। এরূপ ব্যবস্থা থাকলে মিনারা কিংবা উঁচু স্থানে গিয়ে উঠে আযান দেয়ার প্রয়োজন নেই। আর যদি কোন মসজিদে মাইক কিংবা মিনারা ও উঁচু স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে মসজিদের বাইরে সমতল স্থানে অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে দাঁড়িয়েই আযান দেয়া যাবে। আর জুম'আর ছানী আজান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সমানে দাঁড়িয়ে দিবে। ছানী আযান দেওয়ার জন্য প্রথম কাতারে দাঁড়ানো জরুরি নয়, যে কোন কাতার থেকেই আজান দেওয়া যায়, তবে খতীবের বরাবার দাঁড়ানো জরুরি। (শামী, ১/২৫৭)


৪ বার

اللهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার

অর্থঃ আল্লাহ্ মহান


২ বার

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

উচ্চারণঃ আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই

২ বার

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

উচ্চারণঃ আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল


২ বার

حَيَّ عَلَي الصَّلُوةِ

উচ্চারণঃ হাইয়্যা আলাস সালাহ

অর্থঃ নামাযের দিকে এসো


২ বার

حَيَّ عَلَي الْفَلَاحِ

উচ্চারণঃ হাইয়্যা আলাল ফালাহ

অর্থঃ সাফল্যের দিকে এসো


> ফজরের নামাযের আযানের সময় নিম্নোক্ত বাক্যটি দু'বার বলতে হবে। অন্য কোন ওয়াক্তে বলতে হবে না।

২ বার

الصَّلُوةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ

উচ্চারণঃ আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম

অর্থঃ ঘুম হতে নামায উত্তম


২ বার

اللهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার

অর্থঃ আল্লাহ্ মহান


১ বার

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ

উচ্চারণঃ লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ

অর্থঃ আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই

আযানের জবাব

আযান দেয়ার সময় যত লোক উক্ত আযান শুনবে সকলকেই আযানের প্রতি উত্তর দিতে হবে। যখন তাদের কানে আযানের প্রতিধ্বনিগুলো শ্রুত হবে, তখন তারা ঠিক অনুরূপই উত্তর দিতে থাকবে। তবে শুধুমাত্র যখন 'হাইয়্যা আলাস সালাহ' এবং 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' শুনবে তখন বলবে, 'লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ' )لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ(। আর ফজরের আযান যখন শুনবে 'আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম' তখন বলবে 'সাদাক্বতা ওয়া বারারতা' )صَدَقْتَ وَ بَرَرْتَ( (সহীহ বুখারী, হাঃ ৫৮৬, মিশকাত, হাঃ ৬৫৮, সহীহ মুসলিম, হাঃ ৭৩৬, মির'আত, হাঃ ৬৬২)

আযানের দোয়া

আযানের পর নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করতে হয়। আযানের পর দরুদ শরিফ পড়ে এই দোয়া পড়া সুন্নত।

اللهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلوةِ الْقَائِمَةِ، أَتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُودَانِ الَّذِي وَعَدْتَهُ، وَارْزُقْنَا شَفَاعَتَهُ يَوْمَ الْقِيمَةِ، إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দা'ওয়াতিত তা'ম্মাহ্। ওয়াছছালাতিল ক্বা'য়িমাহ্। আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদ্বীলাহ্। ওয়াদ্দারাজাতার রাফিআহ্। ওয়াবআছহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযী ওয়াততাহ্। ওয়ারজুক্বনা শাফাআতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাহ্। ইন্নাকা লা তুখলিফুলমী-আ'দ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ওসীলা তথা জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শাফাআত নসীব কর। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। (মুসলিম, হাঃ ৭৩৫, বুখারি, হাঃ ৬১৪, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী, হাঃ ৯৯, মুজামুল কবির, হাঃ ৯৭৯০, ১২৫৫৪, বায়হাকী, হাঃ ২০০৯)

যাদের জন্য আযানের উত্তর প্রদান জরুরী নয়

আযানের বাক্য যাদের কানে যাবে, তাদেরকেই উত্তর প্রদান করতে হবে এমন নয়। নির্দিষ্ট কিছু লোক এর উত্তর প্রদান হতে বিরত থাকবে। যেমন-

১. নামাযরত ব্যক্তি।

২. পবিত্র কুরআন পাঠরত ব্যক্তি।

৩. খুতবা পাঠকারী ও শ্রবণকারী।

৪. প্রস্রাব পায়খানা থাকাকালীন।

৫. হায়েয নেফাছ ওয়ালী মহিলা।

৬. খাবার সময়।

৭. স্ত্রী সহবাসের সময়।

৮. অপবিত্র অবস্থায় যাদের উপর গোসল ফরয।

যেখানে আযান দেয়া সুন্নাত ও ইকামত

সুন্নাত 

১. নবজাতক শিশুর কানে।

২. ভীষণ ঝড় ও তুফানের সময়।

৩. ভয়ের সময়।

৪. মৃগী রোগীর কানে।

৫. ভূত, পেত্‍নী আক্রান্ত লোকের কানে।

৬. সজ্ঞাহীন ব্যক্তির কানে।

৭. আগুন লাগলে।

৮. যে মূসাফির দল হতে হারিয়ে যায় তাকে দলে ফিরে আনার জন্য।

৯. প্রচন্ড যুদ্ধ ও শত্রুর হামলার সময়।

ইকামত

ইকামত অর্থ প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, শুরু হওয়া ইত্যাদি। যেহেতু ইকামতের দ্বারা নামায শুরু তথা প্রতিষ্ঠিত হয়, সেহেতু একে ইকামত বলা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমআর নামাযের ফরয নামায আদায় করার পূর্বে ইকামত দিতে হয়, ইকামতের শব্দগুলো আযানের বাক্যের অনুরূপ, শুধুমাত্র 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' বলার পর 'ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ' )قَدْ قَامَتِ الصَّلَوة( দু'বার বলতে হবে। ইকামতের সময় কানের ছিদ্র বন্ধ করার প্রয়োজন নেই এবং ডানে-বামে, মুখ ফিরাবারও দরকার নেই। আর আযানের মত উচ্চকণ্ঠেও বলতে হয় না। আজানের মতো মুসল্লিদের একামতের জবাব দেওয়াও মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ১/৫৭) একামতের জবাবও আজানের অনুরূপ। শুধু একামতের মধ্যে 'ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ'-এর জবাবে 'আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা )أَقَامَهَا اللهُ وَأَدَامَهَا( বলবে। (আবৃ দাউদ, হাঃ ৫২৮, সহীহ মুসলিম, হাঃ ৭৩৬)


আযানের সুন্নত ও মুস্তাহাবসমূহ

> মসজিদের বাইরে উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে আজান দেয়া।

> যথাসম্ভব উচ্চস্বরে আজান দেয়া দরকার। তবে একা একা নামাজ আদায়ের জন্য স্বাভাবিকভাবে আজান দিলেও চলবে।

> আজানের সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা উভয় কানের ছিদ্র বন্ধ করে রাখা মুস্তাহাব।

> মদ ও গুন্নাহ আদায়পূর্বক আজানের শব্দগুলো লম্বা করে থেমে থেমে বলা সুন্নত, যাতে প্রত্যেক বাক্য উচ্চারণের পর শ্রোতারা জবাব দিতে পারে।

> 'হাইয়্যা আলাস সালাহ' বলার সময় ডান দিকে ও 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' বলার সময় বাম দিকে মুখ ফিরানো সুন্নত।

> আজান ও ইকামতের সময় কিবলার দিকে ফিরে থাকা সুন্নত।

> আজান দেয়ার সময় 'হদসে আকবর' (অর্থাৎ বড় নাপাকি। যথা যৌনকারণে বীর্যপাত হওয়া, স্বপ্ন দোষ।

> আজান দেয়ার সময় 'হদসে আকবর' (অর্থাৎ বড় নাপাকি। যথা যৌনকারণে বীর্যপাত হওয়া, স্বপ্ন দোষ হওয়া। এ ধরনের নাপাকি দূর করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী গোসল করা জরুরী তবে অজু-গোসলের পানি না থাকিলে তায়াম্মুম দ্বারাও উভয় প্রকারের অপবিত্রতা দুর করা যায়) থেকে মুক্ত বা পবিত্র হওয়া সুন্নত। বে-গোসল অবস্থায় আজান দেয়া মাকরূহে তাহরিমী।

> ফরজে আইন (অর্থাৎ যে কাজ প্রত্যেক বালেগ, বিবেকবান নর-নারীর উপর সমানভাবে ফরজ। যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া) ব্যতীত অন্য কোনো নামাজের জন্য আজান-ইকামত লাগে না। যেমন জানাজার নামাজ, বিতর নামাজ, ঈদের নামাজ, কুসূফ-খুসূফের নামাজ ও ইস্তেস্কার নামাজ।

> আজান বা ইকামত দেয়ার সময় কথা বলা নিষেধ।

শেষ কথা ➡️ এই পোস্টে আমরা আপনাদের জানিয়েছি, আযান দেওয়ার নিয়ম, আযানের জবাব এবং আযানের দোয়া ইত্যাদি বিষয়ে জানলাম। আপনার মতামত এবং প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত মূল্যবান এবং আমরা সব সময় তাদের স্বাগত জানাই। এই রকম আরো পোস্ট চাইলে কমেন্ট করে আমাদের জানান। আবার আপনার সাথে দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার জীবন বিডিতে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url