ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট - ওজন বাড়ানোর উপায়

যদিও অনেক লোক ওজন কমানোর দিকে মনোনিবেশ করে, এমন ব্যক্তিরাও আছেন যারা ওজন বাড়াতে লড়াই করেন। আর তাই, তাদের জন্য ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট আছে এই পোস্টে। এমজেনেটিক্স, মেটাবলিজম বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই হোক না কেন, 

ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট - ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন বাড়ানোটা হারানোর মতোই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। যাইহোক, সঠিক পদ্ধতির সাথে, স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতি করা সম্ভব। এই গাইডে, আমরা নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে ওজন বাড়ানোর  উপায় গুলি অন্বেষণ করব৷


আরো পড়ুন : ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়


ওজন বাড়ানোর উপায়

➪ ওজন বৃদ্ধি বোঝা:

ওজন বাড়ানোর কৌশল গুলিতে ডুব দেওয়ার আগে, ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে এমন কারণগুলি বোঝা অপরিহার্য। যদিও অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা একটি প্রাথমিক চালক, অন্যান্য কারণ যেমন জেনেটিক্স, বিপাক, হরমোনের মাত্রা এবং জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপরন্তু, থাইরয়েডের ব্যাধি, হজম সংক্রান্ত সমস্যা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো কিছু চিকিৎসা শর্ত ওজন বৃদ্ধিকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে।

➪ পুষ্টি এবং খাদ্য:

ওজন বাড়ানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে একটি হল ক্যালোরি উদ্বৃত্ত নিশ্চিত করা। এর অর্থ হল আপনার শরীর দিনে যত বেশি ক্যালোরি পোড়াচ্ছে তার চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা। যাইহোক, খালি ক্যালোরির পরিবর্তে পুষ্টি-ঘন খাবার গুলিতে ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ডায়েটে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলির ভারসাম্য অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার যেমন চর্বিহীন মাংস, হাঁস-মুরগি, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্য, লেবু এবং বাদাম পেশী বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য অপরিহার্য। কার্বোহাইড্রেট শক্তি সরবরাহ করে এবং পুরো শস্য, ফল, শাকসবজি এবং স্টার্চি শাকসবজির মতো উৎস থেকে আসা উচিত। অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ এবং তেলে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি হরমোন উৎপাদন এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

➪ খাবার পরিকল্পনা:

ক্যালোরির সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রহণ নিশ্চিত করতে, খাবার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি বিবেচনা করুন। সারাদিনে তিনটি প্রধান খাবার এবং স্ন্যাকসের লক্ষ্য রাখুন। পুষ্টির পরিমাণ সর্বাধিক করার জন্য প্রতিটি খাবারে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যদি বড় অংশ খেতে কষ্ট করেন, ক্যালোরি-ঘন খাবার এবং পানীয় যেমন স্মুদি, শেক, বাদাম, বাদাম মাখন, শুকনো ফল এবং গ্রানোলা বেছে নিন।

➪ শক্তি প্রশিক্ষণ:

অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের পাশাপাশি, আপনার ফিটনেস রুটিনে শক্তি প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা পেশী ভর অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যৌগিক ব্যায়ামের উপর ফোকাস করুন যা একাধিক পেশী গ্রুপকে লক্ষ্য করে যেমন স্কোয়াট, ডেডলিফ্ট, বেঞ্চ প্রেস, সারি এবং ওভারহেড প্রেস। ধীরে ধীরে ওজন, সেট, এবং সময়ের সাথে পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি করে প্রগতিশীল ওভারলোডের লক্ষ্য করুন।

➪ বিশ্রাম এবং পুনরুদ্ধার: 

বিশ্রাম এবং পুনরুদ্ধারের সময়কালে পেশী বৃদ্ধি ঘটে, তাই ঘুম এবং শিথিলকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। পেশী মেরামত এবং হরমোন উৎপাদন সমর্থন করার জন্য প্রতি রাতে 7-9 ঘন্টা মানসম্পন্ন ঘুমের লক্ষ্য রাখুন। আপনার পেশী সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করার জন্য আপনার ওয়ার্কআউট রুটিনে বিশ্রামের দিনগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন।

➪ পরিপূরক:

যদিও পুরো খাবার থেকে পুষ্টি প্রাপ্ত করা সর্বোত্তম, পরিপূরক তাদের ক্যালোরি এবং পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সংগ্রামকারীদের জন্য উপকারী হতে পারে। একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের নির্দেশনায় আপনার নিয়মে প্রোটিন পাউডার, ওজন বৃদ্ধিকারী, ক্রিয়েটাইন এবং ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড যোগ করার কথা বিবেচনা করুন।

➪ জলয়োজিত থাকার:

সঠিক হাইড্রেশন সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং ওজন বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পারে। সারাদিন প্রচুর পানি পান করার লক্ষ্য রাখুন, বিশেষ করে খাবার এবং ওয়ার্কআউটের আশেপাশে। ক্যাফিনযুক্ত এবং চিনিযুক্ত পানীয় গুলির অত্যধিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ তারা ক্ষুধা দমন করতে পারে এবং ডিহাইড্রেশনের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

➪ চাপ কে সামলাও:

দীর্ঘস্থায়ী চাপ ক্ষুধা এবং ওজন বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ধ্যান, গভীর শ্বাস, যোগব্যায়াম এবং প্রকৃতিতে সময় কাটানোর মতো মানসিক চাপ কমানোর কৌশলগুলি অনুশীলন করুন। সামগ্রিক মঙ্গলকে সমর্থন করার জন্য আপনাকে আনন্দ এবং শিথিলতা এনে দেয় এমন কার্যকলাপ গুলিকে অগ্রাধিকার দিন।

➪ অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করুন:

আপনার ওজন, পরিমাপ, এবং শক্তি বৃদ্ধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে আপনার অগ্রগতির ট্র্যাক রাখুন। আপনার লক্ষ্য এবং অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার খাদ্য এবং ওয়ার্কআউট রুটিন সামঞ্জস্য করুন। মনে রাখবেন যে ওজন বাড়াতে সময় এবং ধারাবাহিকতা লাগে, তাই ধৈর্য ধরুন এবং আপনার দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য গুলিতে মনোনিবেশ করুন।

➪ পেশাদার দিকনির্দেশনা সন্ধান করুন:

আপনি যদি আপনার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ওজন বাড়ানোর জন্য সংগ্রাম করে থাকেন, তাহলে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার, নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান, বা প্রত্যয়িত ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের কাছ থেকে নির্দেশনা খোঁজার কথা বিবেচনা করুন। তারা আপনার ব্যক্তিগত চাহিদাগুলি মূল্যায়ন করতে পারে, কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে এবং আপনাকে নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করার জন্য ব্যক্তিগতকৃত সুপারিশ প্রদান করতে পারে।

ওজন বাড়ানো উপায় টি একটি চ্যালেঞ্জিং যাত্রা হতে পারে, কিন্তু সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতার সাথে, এটি যে কারও জন্য অর্জন যোগ্য। পুষ্টি, শক্তি প্রশিক্ষণ, বিশ্রাম, পরিপূরক, হাইড্রেশন, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং প্রয়োজনে পেশাদার দিকনির্দেশনা খোঁজার উপর ফোকাস করে, আপনি কার্যকরভাবে ওজন বাড়াতে পারেন এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা উন্নত করতে পারেন। মনে রাখবেন ধৈর্য ধরুন, ধারাবাহিক থাকুন, এবং পথ ধরে আপনার অগ্রগতি উদযাপন করুন।


ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা

দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, অল ফ্যাট, ভিটামিন, এবং মিনারেল ধারণ করা উচিত। এই কাজে দুধ, ডাল, মাংস, ডিম, মসৃণ ডাল, ফল, সবজি, নাটস, এবং ড্রাই ফ্রুট খাওয়া উত্তম। এছাড়াও, প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত যাতে শরীরের প্রোটিন স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। শুত্বি হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার, যেটা শরীরের প্রোটিন সিনথেসিস ও ওজন বাড়ানোকে সাহায্য করে।

ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট

ওজন বাড়ানোর ডায়েটে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার এবং হালকা নাস্তা হিসেবে কোন খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে তা তুলে ধরা হলো। এই খাবারগুলো কেন, কিভাবে, এবং কী পরিমাণে খেতে হবে তা জানতে নিচে পড়ুন।
ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট - ওজন বাড়ানোর উপায়

সকালের নাস্তা

ওজন বাড়ানোর জন্য সকালের নাস্তায় যে খাবারগুলো যুক্ত করতে পারেন, তার মধ্যে রয়েছে দুধ, কলা, ডিম ও খেজুর।

দুধ: শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদানই দুধে পাওয়া যায়। দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-১২ আছে। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে, আর ভিটামিন বি-১২ রক্ত তৈরিতে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

দুধ ওজন বাড়াতে বেশ সাহায্য করে। দুধ খাওয়ার একটি বড় সুবিধা হলো, অন্যান্য খাবারের সাথে খুব সহজেই এক গ্লাস দুধ খেয়ে নেয়া যায়। ওজন বৃদ্ধির জন্য সকালের নাস্তার পাশাপাশি যেকোনো বেলার খাবারের সাথে এক গ্লাস দুধ খাওয়া যেতে পারে।

কলা: কলায় ভিটামিন বি-৬ আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার আছে, যা হজমে সাহায্য করে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানোর সাথে সম্পর্ক আছে। এছাড়া কলা খুব সহজলভ্য, বাজারে সারা বছরই পাওয়া যায়। খাওয়ার আগে কেটে নেওয়ার বা সময় নিয়ে ছিলিয়ে খাওয়ার ঝামেলা না থাকায়, সহজেই যেকোনো সময় ১টা বা ২টা কলা খেয়ে ফেলা যায়।

ডিম: ডিমকে ‘প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন’ বলা হয়। এর কারণ এতে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ডিমে থাকা ভিটামিন-এ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ভিটামিন বি২ ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখে। ডিমে জিংক নামের মিনারেল থাকে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ডিম আরও অনেক ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ।

ডিম সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় এবং প্রায় সব খাবারের সাথেই খাওয়া যায়। তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য সকালের নাস্তার সাথে ডিম খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।

খেজুর: এটি একটি অসাধারণ পুষ্টিগুণের ফল। এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়া এতে আয়রন আর ফলিক এসিড আছে, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। খেজুরে ফাইবার বা আঁশ থাকে। ফাইবার হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে। সকালে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নিলে ওজন বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। 

এই খাবারগুলো শুধুমাত্র সকালেই খেতে হবে, বা প্রতিদিনই খেতে হবে — বিষয়টি এমন নয়। এখানে সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকা থেকে একটি বা দুটি খাবার সুবিধামত যুক্ত করতে পারবেন আপনার ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্টে।

দুপুরের খাবার

ডাল: ডাল খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ আছে। মুরগি, গরু ও খাসির মাংস থেকে যেমন প্রোটিন পাওয়া যায়, ডাল থেকেও তেমন প্রোটিন পাওয়া যায়। কিন্তু গরু-খাসির মাংসে কিছু ক্ষতিকর চর্বি থাকে, ডালের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি নেই। এছাড়া আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই সবগুলোই সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন। পাতলা ডালের তুলনায় ঘন ডাল খাওয়া ভালো। 

আমাদের পেটের ভেতরে কোটি কোটি জীবাণু আছে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ করা, ভিটামিন তৈরি থেকে শুরু করে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়। এই উপকারী জীবাণুগুলোকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশেষ কিছু খাবার আছে। এগুলোকে বলা হয় প্রিবায়োটিক খাবার। ডাল এক ধরনের প্রিবায়োটিক খাবার। ডালের পেটের ভেতরের উপকারী অণুজীবগুলোকে সুস্থ রাখে। তাই ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্টে ডাল রাখা ভালো। সকালের নাস্তায় কলার কথা বলা হয়েছে, কলাও এক ধরনের প্রিবায়োটিক — অর্থাৎ, উপকারী জীবাণুর খাদ্য। 

টক দই: দুপুরের খাবার শেষে এক বাটি টক দই খেতে পারেন। টক দই দুধ দিয়ে বানানো, তাই এতে দুধের পুষ্টিগুলো থাকে। শুধু তাই নয়, টক দইতে অনেক উপকারী জীবাণু থাকে। টক দই খাওয়ার মাধ্যমে পেটের ভেতরের উপকারী অণুজীবগুলোর মত নতুন আরও অনেকগুলো উপকারী জীবাণু দেহে যোগ করতে পারেন। এগুলো পরে ক্ষতিকর জীবাণু থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।

তবে মিষ্টি দই এড়িয়ে চলা গেলে ভালো। মিষ্টি দইতেও উপকারী জীবাণু আছে কিন্তু এতে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চিনি যোগ করা হয়। অনেক চিনি, অস্বাস্থ্যকর তেল বা চর্বি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। এগুলো বেশী খেলে শরীরের মাংসপেশি না বেড়ে চর্বি বেড়ে যেতে পারে। এভাবে ওজন বাড়লেও তা স্বাস্থ্যকর হবে না, বরং উল্টো বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তবে মিষ্টি দই কখনোই খাওয়া যাবে না, তা নয়। হঠাৎ হঠাৎ পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে, তবে নিয়মিত না খাওয়াই ভালো।

মুরগির মাংস: দুপুরের খাবারে মুরগির মাংস রাখা যায়। সাধারণত যদি এক টুকরো খাবার অভ্যাস থাকে তাহলে ওজন বাড়াতে ২ টুকরো করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। অনেকে গরু-খাসির মাংস বেশী করে খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে, তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। গরু-খাসির মাংস খেয়ে ওজন বাড়ানো সম্ভব হলেও এগুলোর অস্বাস্থ্যকর চর্বির কারণে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। তাই ওজন বাড়ানোর সময়েও এগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। গরু-খাসির মাংস থেকে যেই প্রোটিন আসতো, মুরগির মাংস, ডিম ও ডাল থেকে আপনি তা অনায়াসেই পেয়ে যাবেন। 

রাতের খাবার

দুপুরের জন্য যেসব খাবার উল্লেখ করা হয়েছে, ওজন বৃদ্ধির জন্য সেগুলো রাতের খাবারের সময়েও প্রযোজ্য। দুপুরে ব্যস্ততার বা বাসার বাইরে থাকার কারণে যদি কিছু বাদ পড়ে যায়, তা রাতের খাবারে যোগ করে নেওয়া যেতে পারে।

বাদাম: ওজন বাড়ানোর জন্য একটা খুব ভালো নাস্তা হচ্ছে বাদাম। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম — আপনার সুবিধামত যেকোনো ধরনের বাদাম খাওয়া যাবে। বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে, অনেক ধরনের মিনারেল, ভিটামিন, ফাইবার আছে। এটিও একটা প্রিবায়োটিক খাবার, অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকা উপকারী জীবাণুকে সুস্থ রাখে। তাই ওজন বাড়ানোর জন্য নাস্তায় কয়েকটা বাদাম খেয়ে নিতে পারেন।

ওজন বৃদ্ধিতে দুপুর-রাতের খাবারের পরে বাদাম খাওয়া যায়। কেনার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন এতে কোনো উপাদান মেশানো না থাকে — যেমন চিনি, লবণ ইত্যাদি। বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে থাকেন, তারা বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। কারণ বাজারে অনেক ধরনের চিনি, লবণ মেশানো বাদাম প্যাকেটে কিনতে পাওয়া যায়। 

কিসমিস: নাস্তার জন্য বাদামের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেতে পারেন। কিসমিস যেহেতু আঙ্গুর ফল শুকিয়ে বানানো হয়, অল্প পরিমাণ কিসমিসেই অনেক ভিটামিন আর মিনারেল থাকে। তবে কিসমিস খেলে কারও কারও দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটা ঠেকাতে শুধু কিসমিস না খেয়ে বাদাম বা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। কিসমিস খাবারে যোগ করতে পারলে ওজন বাড়াতে সেটা অনেক সহায়তা করবে। 

বিভিন্ন ধরনের বীজ: ওজন বাড়ানোর আরেকটা উপায় হল খাবারের সাথে বিভিন্ন ধরনের বীজ যুক্ত করা। সম্ভব হলে মিষ্টিকুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, তিসির বীজ, তিলের বীজ — এগুলো ভাত বা তরকারির ওপর হালকা করে ছিটিয়ে খেতে পারেন। একেকটা বীজ একেক ধরনের পুষ্টি বহন করে। 

যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা ফলের মধ্যে আভোকাডো খেতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে। আমাদের দেশে এই ফলটা সহজে পাওয়া যায় না, পেলেও দাম অনেক বেশি হয়।

ওজন বৃদ্ধির ব্যায়াম

ওজন বাড়াতে খুব ভালো ব্যায়াম হচ্ছে স্ট্রেংথ ট্রেনিং। এ ধরনের ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এর জন্য জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসে, কোন যন্ত্র বা ব্যায়ামের উপকরণের সাহায্য 
ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট - ওজন বাড়ানোর উপায়
ছাড়াই, এ ধরনের ব্যায়াম শুরু করা যায়। ইউটিউব বা গুগলে নিচের শব্দগুলো লিখে খুঁজলেই ব্যায়ামের নির্দেশনাযুক্ত এমন অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। এমন কিছু শব্দ হলো—
  • Pushup
  • Pullup
  • Plank
  • Squat
অনেকে ভাবতে পারেন যে ব্যায়াম করলে শরীর থেকে শক্তি বা ক্যালরি খরচ হয়ে যাচ্ছে, তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য বোধহয় ব্যায়াম করার দরকার নেই। এমন ধারণা সঠিক নয়। ওজন বাড়ানোর সময়েও নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, তাহলে অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়ার ফলে শরীরে শুধু চর্বি জমার সম্ভাবনা কমে আসবে।

ওজন বাড়াতে কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন?

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন বৃদ্ধির জন্য ওজন বাড়ানোর ডায়েটের পাশাপাশি অবশ্যই নিয়মিত ওজন বৃদ্ধির ব্যায়াম করতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সুস্থ থাকার জন্য সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়াম করার অভ্যাস একদমই না থাকলে অল্প অল্প করে শুরু করবেন। তবে শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


ওজন বাড়ানোর পূর্বে কিছু সতর্কতা

১। আপনার ওজন বৃদ্ধি দরকার কিনা সেটা বুঝে নিন। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাদের ওজন বাড়িয়ে স্বাভাবিকে আনা প্রয়োজন। কারণ স্বাভাবিকের চেয়ে অল্প ওজনে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে— রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, অপুষ্টিতে ভোগা, সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা, মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

২। কিছু রোগের কারণে ওজন কম হতে পারে। যেমন, থাইরয়েডের সমস্যা ও ডায়াবেটিস। আবার মানসিক রোগের কারণেও ওজন কমে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। তাই ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করার আগে প্রথমে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক বা মানসিক কোন অসুস্থতার কারণে আপনার ওজন কম কি না, সেটা তিনি খতিয়ে দেখতে পারবেন।

৩। যদি মনে হয় কোন সমস্যার কারণে ঠিকমতো খেতে পারছেন না, বা আগে যে পরিমাণ খাবার খেতেন সে তুলনায় এখন অনেক কম খাবার খেতে পারেন, তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলো গুরুতর কোন রোগের লক্ষণ কি না, সেটা তিনি যাচাই করবেন। এ ধরনের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে—
  • খাবারে অরুচি হওয়া
  • মুখে ঘা হওয়া
  • খাওয়ার পরে পেটে অস্বস্তি হওয়া
  • পেট ফাঁপা লাগা
  • ব্যথা করা
  • খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া
  • খাবার গলায় আটকে থাকে এমন মনে হওয়া
  • খাবার গেলার সময় ব্যথা হওয়া
  • অল্প খাবার খেয়েই পেট ভরে গেছে এমন মনে হওয়া
  • খুব ক্লান্ত লাগা
  • কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পরা
  • পায়খানার অভ্যাসে পরিবর্তন আসা – যেমন আগের চেয়ে বেশী বার যাওয়া লাগছে

৪। ওজন বাড়ানোর জন্য নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে মোটা হওয়ার ওষুধ বিক্রির চেষ্টা করে থাকে। এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।

৫। খাবারের পরিমাণ আর ধরণে পরিবর্তন আনলে অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে আনা উচিত। ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন, ফলমূল, ডাল, বাদাম ও শাকসবজি — এগুলো খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে পানি এবং পানিজাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণও বাড়াতে হবে। এরপরও যেসব খাবার খাওয়ার পরে গ্যাসের সমস্যা বেশি দেখা দেয় বলে মনে হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলাই উত্তম।

শেষ কথা ➡️ এই পোস্টে আমরা আপনাদের সাথে ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট  এবং ওজন বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনার মতামত এবং প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত মূল্যবান এবং আমরা সব সময় তাদের স্বাগত জানাই। আবার আপনার সাথে দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার জীবন বিডিতে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url